প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি ২০২৪ | কীভাবে মূল্যায়ন করবো?

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি ২০২৪ এবং তা  কিভাবে করতে হবে তা যেমন আজকের আলোচনার বিষয়। কিন্তু তার সাথে সাথে আমরা আজকে জানবো কিভাবে ১ম থেকে ৩য় শ্রেণির পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে হবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল্যায়ন নির্দেশিকা ২০২৪


এর সাথে আমরা জানবো কিভাবে একজন শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করতে হবে, তার কোন কোন ক্ষেত্রকে সামনে রেখে মূল্যায়ন করতে হবে।

শিক্ষার্থী মূল্যায়ন কি

পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হল একটি পদ্ধতি যা শিক্ষাঙ্গনে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত উন্নতি, দক্ষতা, জ্ঞানের স্তর এবং শিক্ষাগত লক্ষ্যাবলী অর্জনের মাত্রা নির্ণয় করা হয়। এটি শিক্ষকদের এই মূল্যায়ন থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের উন্নতির একটি পথ নির্দেশ করা, পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনা বা শেখার কৌশল সমন্বয় করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

মূল্যায়নের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে যেমন:

  • ফর্ম্যাটিভ মূল্যায়ন (Formative Assessment): এই ধরনের মূল্যায়ন শিক্ষার্থীদের শেখার প্রক্রিয়া চলাকালীন ঘটে থাকে যাতে তারা কি শেখেছে এবং কি উন্নতি করতে পারে তা বুঝতে পারে।
  • সামিটিভ মূল্যায়ন (Summative Assessment): এটি শিখন প্রক্রিয়ার শেষে প্রদান করা হয়, যাতে শিক্ষার্থীর সম্পূর্ণ শিক্ষাগত অর্জনের মাত্রা নির্ণয় করা যায়।
  • ডায়াগনস্টিক মূল্যায়ন (Diagnostic Assessment): শিক্ষার শুরুতে এই মূল্যায়ন দ্বারা শিক্ষার্থীদের আগের জ্ঞানের স্তর এবং দুর্বলতা নির্ণয় করা হয়।
  • অনুমানিক মূল্যায়ন (Inferential Assessment): এই ধরনের মূল্যায়ন থেকে শিক্ষকরা ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের বিকাশের সম্ভাবনা বিচার করতে পারে।

মূল্যায়নের প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের শেখার পথের উপর গভীর প্রভাব রাখে এবং এটি শিক্ষকদের তাদের শিক্ষানবিস পদ্ধতি আরও কার্যকর করে তোলার জন্য মূল্যবান তথ্য প্রদান করে।

জমির দলিল একজনের নামে আর রেকর্ড আরেকজনের নামে হলে কি করবেন জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি ২০২৪ কিভাবে

জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ এর নির্দেশনা অনুযায়ী  ১ম শ্রেণির মূল্যায়ন নির্দেশনা ছিল জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর।

যেখানে প্রতিটি অধ্যায়ের নির্দিষ্ট কিছু পাঠ ছিল এবং সেই নির্দিষ্ট পাঠের বিপরীতে শিক্ষার্থী মূল্যায়নের জন্য এক বা একাধিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা তার সাথে এই অধ্যায়ের পাঠ বিভাজন বেশ কয়েকটি আছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি ২০২৪-এ  পাঠের জন্য আলাদা আলাদা শিখনফল নির্দেশ করা আছে। আবার শিখনফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নের তিনটি ক্ষেত্র বিবেচনা করে তা শিক্ষক ডায়েরী-১ এর মধ্যে লিপিবদ্ধ করে রাখার প্রয়োজনীয়তা ছিল। যাতে করে পরবর্তীতে শিক্ষক ডায়েরী-২ এর চূড়ান্ত মুল্যায়ন ফলাফল প্রস্তুত করা যায়।

এক্ষেত্রে যে সমস্যা ছিল সেটি হলো একটি নির্দিষ্ট অধ্যায়ে যতগুলো পাঠ ছিল প্রতিটি পাঠের জন্যই আলাদা করে মূল্যায়ন রেকর্ড করা। যে কারণে এটি ছিল একটি সময়ের ব্যাপার।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি ২০২৪-এ কি কি পরিবর্তন

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ২০২৪ এর মাধ্যমে নতুনভাবে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। এতে অধ্যায়ভিত্তিক বা প্রতিটি অধ্যায়ের মধ্যে থাকা শ্রেণিভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতার বিপরীতে পারদর্শিতার নির্দেশক বা Performance Indicator ( PI ) এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হবে।

এক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখতে হবে একটি অধ্যায়ের মধ্যে এক বা একাধিক শ্রেণির ভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা থাকতে পারে। তাই যতগুলো অর্জন উপযোগী যোগ্যাতা থাকবের তার বিপরীতে থাকা পারদর্শিতার নির্দেশক বা Performance Indicator- (PI) এর সূচক অনুযায়ী তাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে।

মূল্যায়নের জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনটি মাত্রা রয়েছে। এবং এর পরিমাপের জন্য ভালো ( Good ),  খুব ভালো ( Very Good ) উত্তম ( Excellent ) নামে তিনটি মাত্রার জন্য মূল্যায়নের লিখিত রূপ দেওয়া আছে। এবং কোনটি কোন ক্ষেত্রে দিতে হবে তাও স্পষ্ঠ করে দেওয়া আছে।

এক্ষেত্রে একটি বিষয় শিক্ষকে মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটি পারদর্শিতার সূচক বা PI অনুযায়ী অধ্যায় শেষে করতে এমন না। যখন যে সূচক থাকবে এবং এর সংশ্লিষ্ট পাঠ চলবে তখনই সেই মূল্যায়ন করে নিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন প্রগ্রেস রিপোর্ট  বা রিপোর্ট কিভাবে তৈরি করব

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি ২০২৪ এর রিপোর্ট কার্ড বা প্রগ্রেস রিপোর্ট তৈরি করার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় পাঠ্য শিক্ষাক্রম বোর্ড বা NCTB কর্তৃক প্রস্তুতকৃত একটি এপ্স বা সফটওয়্যার এক্সেল শিট রয়েছে। যার মাধ্যমে খুব সহজে শ্রেণি ভিত্তিক সকল শিক্ষার্থীদের রিপোর্ট কার্ড কিছু সময়ের মধ্যেই প্রস্তুত করা সম্ভব।

কিভাবে রিপোর্ট তৈরি করব

শিক্ষার্থীদের রিপোর্ট এই এক্সেল শিটের মাধ্যমে তৈরি করতে হবে আগে কিছু কাজ করে নিতে হবে। এগুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করছি।

ক) এক্সেল শিট ডাউনলোডঃ এই এক্সেল শিটটি ডাউনলোড করতে হলে এখানে ক্লিক করলে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। অথবা www.nctb.gov.bd এই ঠিকানায় গিয়ে মূল্যায়ন নির্দেশিকাতে ক্লিক করেও  ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এখানে ১ম শ্রেণি থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত আলাদা আলাদা শিট দেওয়া আছে প্রতিটি শ্রেণির জন্য আলাদা করে ডাউনলোড করে নিতে হবে।

খ) এক্সেল শিট-এ কিছু সেটিংসঃ আপনার ডাউনলোডকৃত এক্সেল শিটটি ওপেন করতে গেলে কিছু পারমিশন চাইতে পারে। আপনি সে পারমিশন দিয়ে দিতে পারেন এতে আপনার কোন ঝুঁকি নাই। আবার দেখা যায় উপরে একটি Security Risk নামে মেসেজ আসতে পারে।

তাহলে আপনি ফাইলটি বন্ধ করে দিবেন। এবং ফাইল বন্ধ থাকা অবস্থায় এর উপর মাউসের রাইট বাটন ক্লিক করে নিচে Properties অপশনটিতে ক্লিক করে একটি উইন্ডো আসবে।

যেখানে General অপশনের নিচে ডান দিকে Advance এর নিচে Unlock অপশনে টিক মার্ক দিয়ে প্রথমে Apply এবং পরে Ok বাটনে ক্লিক করে দিতে হবে।

এবার ফাইলটি ওপেন করার পর যদি PROTECTED VIEW লিখা আসে তাহলে Enable Editing –এ ক্লিক করে নিন। তারপর ফাইলটি ওপেন হয়ে আপনার কাজের জন্য উপযোগী হয়ে যাবে।

এই ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন।

গ) এক্সেল শিটে কিভাবে কাজ করবঃ আপনি এক্সেল শিটটি ওপেন করার পর নিচে ১১টি ট্যাব দেখতে পারবেন।

এখান থেকে প্রথমে Instruction থেকে নিয়মগুলো পড়ে নিতে পারেন। তারপর Student Info থেকে শ্রেণি ভিত্তিক সকল শিক্ষার্থীর তথ্য এন্ট্রি দিতে হবে। এক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে একই শ্রেণির রোল নাম্বার একই রকম একাধিকবার হতে পারবেনা।

যেমনঃ যদি ১ম শ্রেণিতে একাধিক শাখা থাকে তাহলে এখানে রোল নাম্বার দুই সকল শাখার জন্য ০১ থেকে শুরু করতে পারবেননা। কারণ ১ম শাখায় ০১ আবার পরের শাখায় ০১ দিলে রিপোর্ট পাবেননা।

এক্ষেত্রে আপনাকে শাখার রোল নাম্বার গুলো ইউনিক রেখে কাজ করতে হবে যেমনঃ ১ম শাখার ক্ষেত্রে ১০১ থেকে এবং পরের শাখার ক্ষেত্রে ২০১ থেকে এভাবে নিয়ে করতে পারেন। অথবা নিজের মত করে আলাদা করে নিতে হবে।

এবং এর সাথে সাথে উপরে ডানদিকে প্রধান শিক্ষক, শ্রেণি শিক্ষক এবং বিষয় শিক্ষকদের নাম লিখে নিতে হবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি ২০২৪-এ যতগুলো বিষয় এন্ট্রি দেওয়া হবে সবগুলো ইউনিকোড বাংলায় লিখতে হবে।

তারপর বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন সূচক-এর নির্দেশক অনুযায়ী  এন্ট্রি দিতে হবে। যেমনঃ ভালো হলে G, খুব ভালো হলে V এবং উত্তম হলে E লিখতে হবে। অথবা ড্রপডাউনে ক্লিক করে সিলেক্ট করে নিতে পারেন।

এভাবে প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়নের তথ্য এন্ট্রি দিতে হবে।

ঘ)  রিপোর্ট জেনারেট করবো কিভাবেঃ সর্বশেষ একটি ট্যাব আছে যেখানে  ReportCard লিখা দেখবেন। সেখান থেকে রোল নম্বর এর এখান থেকে ক্লিক করে নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর রোল নম্বর সিলেক্ট করে ডানপাশে থাকা Report এ ক্লিক করলে অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট তৈরি করে আপনার সামনে নিয়ে আসবে।

ঙ) কিভাবে রিপোর্ট ডাউনলো বা প্রিন্ট করবঃ রিপোর্ট জেনারেট হওয়ার পর File-এ ক্লিক করে এখান থেকে Print করতে চাইলে প্রিন্ট অপশনে ক্লিক করতে হবে আর যদি সেভ করে রাখতে চান তাহলে Save As অপশন থেকে ক্লিক করে যেখানে Save করে রাখবেন সেখানে সিলেক্ট করে Save as type থেকে pdf  সিলেক্ট করে save বাটনে ক্লিক করলেই সেভ হয়ে যাবে।

তাহলে আপনি দেখবেন আপনার শিক্ষার্থীদের রিপোর্ট একবারে দ্রুত ও সহজ নিয়মে তৈরি হয়ে যাবে।

পরিশেষে একটি কথা। এই মূল্যায়ন পদ্ধতির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি NCTB প্রদত্ত নির্দেশনাকে অনুসরণ করা হয়েছে। যদি কোন কিছু জিজ্ঞাসা থাকে বা অস্পষ্ঠতা থাকে অবশ্যই মন্তব্যের ঘরে জানিয়ে দিতে পারেন।

ধন্যবাদ

Next Post Previous Post