জমির দলিল অনুসন্ধান কিভাবে করতে হয়

 

জমির দলিল কিভাবে খুঁজে বের করেবন? 

জমির দলিল কি

জমির দলিল অনুসন্ধান কিভাবে করতে হয় তা জানার আগে জানতে হবে জমির দলিল কি? কোন একটি নির্দিষ্ট ভূমির জন্য মালিকানা দাবী করার জন্য দেশের সরকার কর্তৃক নিয়মের মধ্য দিয়ে কয়েক ফর্দ বিশিষ্ট কাগজ যা নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিবন্ধন হতে হয় তাকেই জমির দলিল বলে।

এই জমির দলিল একজন মালিকানার মালিকানাস্বত্ব নির্ধারণ করে।

এই জমির দলিল আবার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমনঃ সাফ কবলা দলিল, বিনিময় দলিল, এওয়াজ বদল দলিল, দানপত্র দলিল, হেবা দলিল ইত্যাদি।

অনেক সময় দেখা যায় জমির দলিল কোনো যদি হারিয়ে যায় তাহলে তা খুঁজে বের করার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা অনেক ক্ষেত্রে খুব জটিল হয়ে পড়ে।

জমির দলিল অনুসন্ধান কিভাবে করে নকল বা সার্টিফাইড কপি কোথায় পাব?

জমির দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি সব জায়গায় পাওয়া যায়না। তার সমাধানের জন্য আপনি দুই জায়গায় থেকে যেকোনো এক জায়গা থেকে আপনি পেতে পারেন।

১. উপজেলা সাবরেজেস্ট্রি অফিস

আপনার জমি যে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অধীনে আছে সেই অফিসে আপনাকে যোগাযোগ করলে আপনি আপনার জমির নতুন দলিল এবং পুরাতন দলিল সংগ্রহ করতে পারবেন।

তবে যদি জমির দলিল খুব বেশি দিনের পুরনো হয় তাহলে কিন্তু আপনি উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে পাবেন না।

২. জেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস

এখান থেকে সকল ধরনের সার্টিফাইড বা নকল পাওয়া যাবে এখানে।

ইন্ডিয়ান বা ভারতীয় ভিসার আবেদন করবেন কিভাবে তা জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

জমির দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি তুলতে কত টাকা লাগে?

জমির দলিল অনুসন্ধান কিভাবে করতে হয় তা যদি আপনি প্রক্রিয়া জানতে পারেন তাহলে নির্ধারিত অফিস অতে সংগ্রহ করতে পারবেন।

এখন প্রশ্ন হলো জমির দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি তুলতে কত টাকা খরচ করতে হবে।

তা জানার আগে আপনাকে বুঝতে হবে দলিলের কপি আপনি কিভাবে পাবেন।

জমির দলিল এর নকল বা সার্টিফাইড কপি পেতে আপনাকে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি নিতে হবে। এর জন্য আপনাকে রেজিস্ট্রেশন ফি শিডিউলের দফা “জি(এ)” এবং দফা “ডিজি” এর মধ্যে নির্ধারিত ফি মোতাবেক পরিশোধ করতে হবে।

এখানে একটি কথা জরুরী জানা দরকার যে আপনি যদি জরুরীভাবে দ্রুত নকল বা সার্টিফাইড কপি উঠানো প্রয়োজন পড়ে তাহলে আপনাকে দফা “জি(বি)” এর মধ্যে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে।

স্ট্যাম্পে সিডিউল এর দফা অনুযায়ী আপনার কাঙ্ক্ষিত দলিলে ব্যবহৃত স্ট্যাম্প যদি শুল্কের পরিমাণ ০ থেকে ১০০০ টাকা হয় তাহলে সেই দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপির জন্য আপনাকে ১০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

তবে আবার যদি সেই শুল্কের পরিমাণ ১০০০টাকার বেশি হয় তাহলে নকল বা সার্টিফাইড কপির জন্য ২০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

এখন আমরা জানবো উপরোল্লিখিত দফা সম্পর্কে জানবো।

বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে যেতে এখানে ক্লিক করুন। 

দফা “জি(এ)”:

কোন হেতু, ভুক্তি বা দলিলের নকল প্রস্তুতকরণ বা প্রদান করার জন্যঃ

দলিলের প্রতি ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা তার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা।

দফা “জি(বি)”:

কোনো আবেদনকারী যদি মনেকরে অফিস চলাকালীন সময়ে স্বাভাবিক কার্যক্রমের চেয়ে বা আলাদাভাবে সময়ে নিতে চান বা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেতে চান তাহলে আপনাকে অতিরিক্ত আরও ৫০টাকা দিতে হইবে এবং যদি নকল বা সার্টিফাইড কপি যদি চার (০৪) পৃষ্ঠার অধিক হয়, তাহলে আপনাকে প্রতি পৃষ্ঠার জন্য ১৫ টাকা হারে অতিরিক্ত ফি পরিশোধ করতে হবে।

দফা “জি(জি)”:

কোন দলিল বা ভুক্তি এর নকল প্রস্তুতকরণ বা প্রদানের ক্ষেত্রে “জি(এ)”-তে উল্লিখিত ফি ছাড়াও নকল নবিশগণের পারিশ্রামিক বাবাদ নিম্নোক্ত মোতাবেক অতিরিক্ত খরচ আপনাকে পরিশোধ করতে হবে।

ক) দলিল যদি প্রতি ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা তার অংশ বিশেষের জন্য ৩৬ টাকা প্রদান করতে হবে।

জমির দলিল অনুসন্ধান কিভাবে করতে কত দিনের মধ্যে নকল বা সার্টিফাইড কপি পাওয়া যায়

জমির দলিল অনুসন্ধান করার পরে যদি এটি পাওয়া যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে এর হার্ড বা প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করতে সাধারণত ৫ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে সেটা নির্ভর করে স্থানীয় অফিসের কর্মব্যস্ততার উপর।

পুরাতন জমির দলিল অনুসন্ধান বা তল্লাশি দিয়ে কিভাবে নকল বা সার্টিফাইড কপি পাওয়া

প্রায় অনেক ক্ষেত্রেই দেখতে পাওয়া যায় যে ১৫ বছর বা ২০ বছর বা এরও বেশি সময়ের আগের জমির বায়া দলিলের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তার হাতে বা সংগ্রহে কোনো প্রকার জমির বালাম নাম্বার, দলিল নম্বর, তারিখ এমনকি পৃষ্ঠা নাম্বার কিছুই নাই। তাহলে নিশ্চয় একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এমনকি অনেকে হতাশ হয়ে পড়ে।

এখন মূল আলোচনার বিষয় হলো তাহলে কিভাবে জমির দলিল অনুসন্ধান করে বা জমির দলিল তল্লাশি দিয়ে এই জমির দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি পাওয়া যাবে এবং কিভাবে তল্লাশি দিতে হবে।

এই আলোচনার আগে আমরা একটু দেখে নিই এই যে দলিল সেটা কিভাবে রেজিস্ট্রি কার্য সম্পাদনের পর এই নাম্বারগুলো পড়ে।

বালাম বই কি

যখন দাতা এবং গ্রহীতার মধ্যকার বুঝাপড়ার মাধ্যমে তাদের আনুষ্ঠানিক কার্য সম্পাদন করা হয় তখন  রেজিস্ট্রি করার পর অনুমোদিত হলে প্রথম যে বইয়ে তা বিবরণ সহ লিপিবদ্ধ করা হয় তাকেই বলা হয় বালাম বই।

বালাম বইয়ে লিপিবদ্ধ করার পর রেজিস্ট্রি অফিস কর্তৃক দলিলের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে প্রত্যেকটি দলিলের একটি সূচীপত্র তৈরি করা হয়।

এই ধরনের কার্য সম্পাদন করার পর রেজিস্ট্রি অফিস দলিলের পেছনের বা শেষ পৃষ্ঠায় দলিল নাম্বার, বালাম নাম্বার, পৃষ্ঠা নাম্বার এবং তারিখ লিখে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর করে  দলিলের মূল কপি গ্রহীতাকে হস্তান্তর করা হয়।

এখন আপনার সংগ্রহে যদি দলিলের এই সকল তথ্যাদি থাকে তাহলে আপনি খুব স্বল্প সময়ে তল্লাশি দিয়ে দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে পারবেন।

আর যদি এই ধরনের কোনো তথ্যই আপনার হাতে না থাকে তাহলে আপনি তল্লাশির মাধ্যমে আপনাকে জমির দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে পারবেন।

কিভাবে জমির দলিলের তল্লাশি দিব

আপনাকে জমির তল্লাশি দেওয়ার জন্য প্রথমেই যেটির প্রয়োজন হবে সেটি হচ্ছে জমির দলিলের রেজিস্ট্রি সন ও তারিখ।

কিন্তু আমরা পূর্বেই বলেছি যে এই ধরনের কোনো তথ্য আমাদের হাতে নেই, তাহলে?

তাহলে আমরা বালাম বা সূচীপত্রের মাধ্যমে তল্লাশি দিতে পারি। এখানে একটি কথা বলে রাখা ভাল যে সূচীপত্র কিন্তু দুই ধরনের বিষয়ের উপর লিপিবদ্ধ করে থাকে। প্রথমটি হচ্ছে দাতা-গ্রহীতার নামের উপর এবং অপরটি হচ্ছে জমির মৌজার উপর ভিত্তি করে।

এই বিপাক থেকে মুক্তি পেতে আপনার জন্য পরামর্শ থাকবে আপনি সূচিপত্র তল্লাশি দেবেন। কারণ হিসাবে বলতে গেলে এর মাধ্যমে আপনি কিছুটা সাশ্রয় পাবেন। মানে এই তল্লাশির জন্য খরচও তুলনামূলকভাবে কম।

জমির তল্লাশি দিলে খরচ কেমন

সূচীপত্র অনুযায়ী জমির তল্লাশি দিতে হলে আপনাকে বছরের জন্য ২০টাকা খরচ গুণতে হবে। যদি একাধিক বছরের জন্য আপনি জমির দলিল তল্লাশি দিতে চান তাহলে কিন্তু প্রথম বছর ব্যতীত অন্যান্য প্রতি বছরের জন্য অতিরিক্ত ১৫টাকা করে আরও বাড়তি খরচ দিতে হবে।

Next Post Previous Post