শিশুর মোবাইল আসক্তি থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়

 

মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তির পথ

একজন শিশুর মোবাইল আসক্তি থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়, কেন শিশুরা মোবাইলে আসক্ত হচ্ছে, শিশুরা মোবাইলে আসক্তি হলে কি ক্ষতি হতে পারে বা এর প্রভাবসমূহ কি কি, শিশুদের মোবাইল আসক্তি থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়।

তাহলে আজকের আলোচনায় আসা যাক।



একজন শিশুর মোবাইল আসক্তি থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়

তা জানার আগে আমাদেরকে একটি কথা জানতে হবে। মোবাইল ফোন আমাদের জীবনে বর্তমানে একটি অপরিহার্য অংশ বা একটি যন্ত্র হিসাবে দেখা যায়। মোট পৃথিবীর প্রায় ৬৭ অংশ মানুষ মোবাইল ফোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবহার করছে।

তার থেকে কিন্তু পরিবারের যে সবচেয়ে আদরের একজন সদস্য রয়েছে সে কিন্তু দূরে নয়।

কেন শিশুরা মোবাইলে আসক্ত হচ্ছেঃ

হ্যাঁ আমি বলছি আপনার পরিবারে ছোট সদস্য যে কিনা শিশু।  সে কিন্তু মোবাইল নিয়ে খেলতে, পড়তে, বসতে ইত্যাদিতে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আমরা যারা পরিবারের বড় সদস্য আছি তারাও কিন্তু এক ধরনের গর্ববোধ করি এই জন্য যে আমাদের সন্তান বা আমাদের পরিবারের শিশু মোবাইল খুব ভাল বুঝে এবং ভাল অপারেট করতে পারে। এতে করে অনেকেই অতি উৎসাহী হয়ে আবার কেউ কেউ আলাদা করে একটি স্মার্ট ফোন কিনে দিচ্ছে।

কারণ হচ্ছে বেশির ভাগ মায়েদের ভাষ্য হচ্ছে, ” আমার ছেলে বা মেয়ে মোবাইল দেখে যখন খায় তখন পরিপূর্ণ খাবার খেতে চায়, কিন্তু এছাড়া সে খেতেই চায় না। আবার এটি যদি তাকে না দেওয়া হয় তাহলে সে আমাদেরকে প্রচুর বিরক্ত করে।”

কিন্তু তাকে কি আপনি সঠিক পথে পরিচালনা করছেন নাকি ভুল পথে  সে নিয়েই আজকের লিখা।

আমি প্রথমেই বলব আপনি যে কারণে তাকে মোবাইল ফোন দিচ্ছেন সে কারণ গুলো এবং এর ফলে কি হচ্ছে বা হবে। তারপরের ধাপে বলব এর সমাধান নিয়ে।

জন্ম নিবন্ধনের জন্য কিভাবে আবেদন করতে হয় তা জানতে এখানে ক্লিক করুন

শিশুরা মোবাইলে আসক্তি হলে কি ক্ষতি হতে পারে বা এর প্রভাবসমূহ কি কিঃ

কেন দিচ্ছেন এবং এর ফল কি হবে বা হতে পারে?

১. খাবার খাওয়ানোর জন্যঃ দেখতে দেখতে খাবার খেলে সে পূর্ণ পেট ভরে খাবার খায়।

ফলাফলঃ সে খায় ঠিক আছে, আপনি তাকে প্রশ্ন করে দেখুন যে, সে কি খেয়েছে বলতে পারে কিনা? কোন খাবারের কেমন স্বাদ? কোন খাবার তার ভাল লেগেছে?

দেখবেন সে এই বিষয়ে কোনো কিছুই জানেনা।

২. আপনি ফ্রি ভাবে কাজ করার জন্যঃ আপনাকে হয়তো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন খেলাধুলা বা তার সাথে সময় দেওয়ার জন্য সে অনবরত বায়না ধরে। আপনার হতে সময় না থাকায় আপনি তাকে মোবাইল ফোন দিয়ে দিয়েছেন।

ফলাফলঃ এতে করে সে তার পৃথিবী এটি ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারেনা। সে এতে করে স্থুলতায় ও মানসিক রোগে ভোগতে থাকবে।

৩. নতুন কিছু শেখার আশায়ঃ  অনেক সময় দেখা যায় প্রায় অভিভাবক তার শিশু বা সন্তান নতুন কিছু মোবাইল এর মাধ্যমে শিখতে পারবে বলে মনেকরে তাকে বিভিন্ন গেম বা পড়া লেখার বিষয় বস্তু দিয়ে থাকে যা থেকে সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নিয়ে সে চলতে থাকে।

ফলাফলঃ বেশি সময় ধরে শুধু মোবাইল ফোনের স্ক্রিন না যেকোনো স্ক্রিনে তার চোখ আটকে রাখার মধ্য দিয়ে তার নরম কিন্তু স্বচ্ছ যে ব্রেইন আছে সেখানে কিন্তু তার একটি খারাপ প্রভাব পড়ে যা তা মানসিক বিকাশে এক সময় বিরাট বাধাঁর সৃষ্টি করে। আবার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে দেখেছে যে এই মোবাইলের ক্ষতিকারকতা অটিজম এর দিকে ধাবিত করে।

শিশুদের মোবাইল আসক্তি থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়ঃ

এখন যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।

তাহলে কীভাবে আপনার সন্তান বা আপনার শিশুকে এ থেকে কিভাবে মুক্ত করতে পারেন বা কিভাবে সে মুক্তি পেতে পারেঃ

১. ধাপ অনুসরণের মাধ্যমেঃ যে সকল শিশু মোবাইলের প্রতি ইতিমধ্যে আসক্ত হয়ে পড়েছে সেখান থেকে আপনি ইচ্ছে করলেই সরিয়ে নিয়ে আসতে পারবেন না। এজন্য ধাপে ধাপে আপনি তার ব্যবহারের সময় কমিয়ে নিয়ে আসুন।  যেমনঃ আপনি একটি টার্গেট নিলেন যে আমি আগামী ১ মাসের মধ্যে তা আধা ঘণ্টায় নিয়ে আসবো।

তাহলে আপনি আপনার লক্ষ্যের নির্ধারিত সময়ের পরিমাণে প্রতিদিন ১০ মিনিট বা একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারেন। এতে করে এক সময় সে আর এই ভাবে আসক্ত থাকবে না।

২. নিজ হাতে খাবার খাওয়াঃ আপনি তাকে নিজ হাতে খাবার খাওয়ানোতে অভ্যস্ত করে উঠাতে হবে। এতে করে খাবারের বৈচিত্রতা সে অনুভব করতে পারবে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে একসাথে খাওয়ার ফলে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হবে।

৩. সৃজনশীলতার মনোভাব গড়ে তোলাঃ যদি সে মোবাইলের ব্যবহারে স্বাদ নেওয়ার আগেই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের ( ছবি আঁকা, বই পড়া, মাটি বা কাগজ বা অন্যান্য উপকরণ দিয়ে নতুন কিছু বানানো ইত্যাদি ) প্রতি তাকে ঝোঁক করানো যায় তাহলে সে আর এই দিকে তাকানোর সময় এবং সুযোগ পাবেনা। এতে করে সে সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাবে।

৪. সচেতনতা বৃদ্ধিঃ আপনার সন্তান বা শিশুকে মোবাইল ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরুন এবং এর নেতিবাচক প্রভাবগুলো নিয়ে আলোচনা করুন যা হবে দীর্ঘদিন দেখবেন এক সময় তা থেকে সে দূরে চলে আসবে।

৫. ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা নির্ধারণঃ এমন সময় দেখা যায় বা এমন পরিবেশ হয়ে উঠে আপনার সন্তান বা শিশুকে আপনি মোবাইল না দিয়ে পারছেন না। তাহলে এক্ষেত্রে কিছু সময় আপনি তাকে বেঁধে দিয়ে দিতে পারেন। যেমনঃ আপনার সন্তানের বয়স যদি ২ থেকে ৫ বছরের মধ্যে হয় তাহলে কোনভাবেই ১ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে মোবাইল দেওয়া যাবে না। আবার যদি তার বয়স ৫ বছরের বেশি বয়স হয় তাহলে কোনভাবেই তাকে ২ ঘণ্টার বেশি সময় তার হাতে মোবাইল দেওয়া যাবে না।

এই সময় কিন্তু পুরো ২৪ ঘণ্টা হিসেব করে হতে হবে।

৬. আলাদা ফোন ব্যবহারঃ আপনার সন্তান যদি কোনো কারণে ( সেটা পড়া লেখা হতে পারে ) আলাদা থাকে বা দূরে থাকে তাহলে তার বয়স ১৮ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কখনই স্মার্ট ফোন কিনে দিবেন না।

৭. নির্দিষ্ট সময়ের পর শাট ডাউনঃ একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর যেমনঃ গ্রামাঞ্চলে হলে রাত সাড়ে ৯টা এবং শহরাঞ্চল হলে রাত ১১টার পর সকল ধরনের প্রযুক্তির স্ক্রিন বন্ধ রাখতে হবে। যেমনঃ মোবাইল, টিভি, কম্পিটার, গেমিং ট্যাব ইত্যাদি।

 

শিশুর মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে সম্পর্কিত ভিডিও দেখুন। 

পরিশেষে একটি কথা যদি আপনার সন্তানের সুন্দর ও সুষ্ঠু একটি ভবিষ্যত চান তাহলে প্রযুক্তি ক্ষতিকর দিক থেকে অবশ্যই দূরে রাখতে চেষ্ঠা করুন। কারণ এর সুফল আপনিই সবার আগে ভোগ করবেন।

 

যদি আজকের লিখা আপনার ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার সামাজিক যোগাযোগের টাইমলাইনে শেয়ার করতে পারেন।

এবং কোনো মতামত থাকলে তা জানাতে  পারেন।

ধন্যবাদ

Next Post Previous Post