কীভাবে অনলাইনে জমির মৌজা ম্যাপ অনুসন্ধান করা যায়

 

আপনার জমির মৌজা ম্যাপের অনুসন্ধান প্রক্রিয়া

জমির মৌজা কীভাবে অনুসন্ধান করা যায়


মৌজা ম্যাপ অনুসন্ধান করা বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে খুব সহজে অনলাইনের মাধ্যমেই করা যায়। আপনি জমির জন্য মৌজা ম্যাপ অনুসন্ধান করতে চান তাহলে আজকের এই নিবন্ধটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কীভাবে ঘরে বসেই জমির মৌজা ম্যাপ অনুসন্ধান করা যায়।

এর সাথে সাথে আপনি জানতে পারবেন কীভাবে মৌজা ম্যাপ ডাউনলোড করা যায়, মৌজা ম্যাপ জমির নকশা ডাউনলোড, মৌজা ম্যাপ অনলাইন আবেদন, মৌজা ম্যাপের আবেদন ফরম, মৌজা ম্যাপ তোলার নিয়ম, কিভাবে অনলাইনে মৌজা ম্যাপ ডাউনলোড করব এর সংশ্লিষ্ট আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর।

মৌজা ম্যাপ কি বা মৌজা ম্যাপ কাকে বলে

মৌজা ম্যাপ হল একটি ভূগোলিক ম্যাপ যা একটি নির্দিষ্ট এলাকার বা ‘মৌজা’-র জমির সীমানা, আকার, ও অবস্থানের বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে। বাংলাদেশ, ভারত এবং অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশগুলিতে, মৌজা ম্যাপ ভূমি ব্যবস্থাপনা, নিবন্ধন, ও ভূমি কর নির্ধারণের জন্য একটি প্রধান নথি।

মৌজা ম্যাপগুলি সাধারণত সরকারি সমীক্ষা বিভাগ দ্বারা তৈরি করা হয়, এবং এগুলি জমির মালিকানা, ব্যবহারের ধরণ (যেমন কৃষি, বাসস্থান, বাণিজ্যিক, ইত্যাদি), ও অন্যান্য ভূমি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে। এই ম্যাপগুলি জমি বিক্রয়, ক্রয়, উন্নয়ন, ও সম্পত্তির মূল্যায়নে অপরিহার্য যা জমির অবস্থান ও সীমানা সম্পর্কিত দ্বন্দ্ব এড়াতে সাহায্য করে।

মৌজা ম্যাপে প্রদর্শিত হয় যে, প্রতিটি জমির টুকরোর জন্য একটি অনন্য প্লট নম্বর থাকে, যা ঐ জমির বিভিন্ন বিশেষত্ব, যেমন এর মালিকানা, আকার, ও ব্যবহারের তথ্য সহজে খুঁজে পেতে সাহায্য করে। এছাড়াও, মৌজা ম্যাপ নগর পরিকল্পনা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, ও ভূমির সুরক্ষা সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে অপরিহার্য।

জমির দলিল একজনের নামে আর রেকর্ড আরেকজনের নামে হলে কি করতে হবে জানতে ক্লিক করুন। 

মৌজা ম্যাপ থেকে জমি পরিমাপ কিভাবে জানা যায়

মৌজা ম্যাপ থেকে জমি পরিমাপ করার প্রক্রিয়া বেশ কঠিন এবং বিস্তারিত, তবে নিম্নলিখিত ধাপগুলি সাধারণভাবে অনুসরণ করা হয়:

মৌজা ম্যাপ প্রাপ্তি: প্রথমে, আপনার যে জমির পরিমাপ জানা দরকার, সেই জমির অবস্থিত মৌজা ম্যাপ প্রাপ্ত করুন। এটি সাধারণত স্থানীয় ভূমি রেকর্ড অফিস বা অনলাইন সরকারি পোর্টাল থেকে পাওয়া যায়।

প্লট নম্বর সনাক্ত করা: মৌজা ম্যাপে আপনার জমির প্লট নম্বর খুঁজে বের করুন। প্রতিটি জমির টুকরোর জন্য একটি অনন্য প্লট নম্বর থাকে যা ম্যাপে চিহ্নিত করা হয়।

পরিমাপ বিবরণ দেখা: মৌজা ম্যাপের সঙ্গে সাধারণত একটি “সম্পত্তির বিবরণী” (Khatian) বা একটি তালিকা থাকে যা প্রতিটি প্লটের আয়তন, মালিকানা, ও ব্যবহারের বিবরণ প্রদান করে। এই তালিকা থেকে আপনার জমির পরিমাপ দেখতে পাবেন।

স্কেল ব্যবহার করা: যদি আপনি ম্যাপ থেকে সরাসরি জমির আয়তন মাপতে চান, তবে ম্যাপে উল্লেখিত স্কেল ব্যবহার করুন। ম্যাপের স্কেল অনুযায়ী, আপনি কাগজে জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মাপতে পারেন।

এরিয়া ক্যালকুলেশন: জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের মাপ থেকে আপনি সঠিক এরিয়া ক্যালকুলেশন করতে পারেন। যদিও এই প্রক্রিয়াটি জটিল হতে পারে বিশেষ করে যদি জমির আকৃতি নিয়মিত না হয়।

পেশাদারের সাহায্য নেওয়া: যদি প্রয়োজন হয়, জমি পরিমাপের জন্য একজন ভূমি সার্ভেয়ার বা পেশাদারের সাহায্য নিন। তারা আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির সাহায্যে সঠিক পরিমাপ প্রদান করতে পারে।

মৌজা ম্যাপ থেকে জমি পরিমাপ করা জমির সঠিক পরিমাপ জানার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়াটি ভূমি ক্রয়, বিক্রয়, উন্নয়ন প্রকল্প, এবং সম্পত্তি মূল্যায়নে অপরিহার্য।

অনলাইনে জমির মৌজা ম্যাপ অনুসন্ধান

অনলাইনে জমির মৌজা ম্যাপ অনুসন্ধান করতে হলে আপনাকে এখানে ক্লিক করতে হবে অথবা https://eporcha.gov.bd/ এই ঠিকানায় গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে হবে। এখানে উপরেরে পাঁচটি অপশন থেকে চার নম্বর যে মৌজা ম্যাপ নামে অপশন পাবেন সেখানে ক্লিক করে নিতে হবে।

তারপর আপনি যে জায়গার জন্য মৌজা ম্যাপ অনুসন্ধান করতে চান সেই অনুযায়ী আপনার কাঙ্ক্ষিত জমির মৌজা ম্যাপের জন্য ধারাবাহিকভাবে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, তারপর সার্ভে টাইপ নির্বাচন করে নিতে হবে।

ঠিক তার ডানপাশে যদি ক্লিক করলে মৌজার নাম আসে তাহলে নাম সিলেক্ট করে নিতে হবে। আর যদি ড্রপডাউনে না আসে তাহলে এখান থেকে নাম লিখে সিলেক্ট করে নিতে হবে। অতঃপর সর্বশেষ সিট নং সিলেক্ট করার পর আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত মৌজা ম্যাপের ছবি দেখতে পাবেন।

যা নিচে কয়েকটি চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো।

জমির মৌজা ম্যাপ খুঁজার  ধাপ সমূহ


 

 

এর মাধ্যমে অনলাইনে জমির মৌজা ম্যাপ অনুসন্ধান করতে হয় তা জানতে পারলাম।কিন্তু এখন আমরা জানতে পারবো কিভাবে অনলাইনে জমির মৌজা ম্যাপের জন্য আবেদন করতে পারবো।

অনলাইনে জমির মৌজা ম্যাপের জন্য আবেদন

উপরোক্ত কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে শেষ করার পর নিচের চিত্রের মতো যখন আপনি জমির মৌজা ম্যাপের ছবি দেখতে পারবেন ঠিক এর নিচের অংশ সবুজ রঙ করা আবেদন করুন লিখা থাকবে। এখানে আপনাকে প্রথমে ক্লিক করতে হবে।

মৌজা ম্যাপ


যেভাবে মৌজা ম্যাপের আবেদন করতে হবে

আবেদন করুন বাটনে ক্লিক করার পর পূর্বের প্রদত্ত উপজেলা, মৌজা এবং সিট নং এবং খতিয়ান নম্বর সহ একটি উইন্ডো আসবে।

এখানে আপনাকে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী আপনার নাম ইংরেজিতে এবং জন্ম তারিখ দিতে হবে। এর সাথে একটি সচল মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। এবংনিচে একটি ক্যাপচা থাকবে তা পূরণ করে যাচাই করুন বাটনে চাপ দিলে আপনার প্রদত্ত তথ্যাদি যাচাই হবে এবং টিক মার্ক দেখাবে।

তারপর আপনাকে আপনার ইমেল যদি থাকে দিতে পারেন আর না থাকলে দেওয়ার প্রয়োজন নাই। আবার এর পরের অংশে আপনার ঠিকানা দেওয়া থাকবে। এটা অনেক সময় ভেরিফাই হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হয়ে যায় আর যদি পূরণ না হয় তাহলে তা লিখে পূরণ করতে হবে।

পরের অংশটি খুবই গুরত্বপূর্ণ। এখানে আপনি আপনার জমির মৌজা ম্যাপ কিভাবে পেতে চান তা ঠিক করে নিতে হবে।

যেমনঃ ডাকযোগে পেতে চান নাকি সরাসরি নিতে চান। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে ডাকযোগেই নিতে হবে। তারপর আপনি কি দেশের ভিতরে নিতে চান নাকি নাকি দেশের বাইরে নিতে চান তা আপনাকে পছন্দ করে নিতে হবে।

মৌজা ম্যাপের অনুসন্ধান


এর পরের অংশে আপনি দেখতে পারবেন আপনার আবেদনের ধরন সার্টিফাইড কপি। এবং এর পাশে থাকবে আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে সেবা প্রদানের তথ্যাদি।

এখানে দেখতে পাবেন আপনার প্রিন্টকৃত মৌজা ম্যাপ প্রদানের সম্ভাব্য তারিখ, এবং এর নির্ধারিত ফি। তার সাথে থাকবে আপনাকে প্রেরণের জন্য পোস্ট ফি। এবং সব মিলিয়ে আপনার প্রদেয় ফি।

জমির মৌজা ম্যাপের জন্য ফি কিভাবে প্রদান করবো

জমির মৌজা ম্যাপ আপনাকে পাওয়ার আপনাকে নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে দেশের বাইরে নিতে হলে একধরনের আর দেশের ভিতরে নিতে চাইলে আরেক ধরনের।

দেশের ভিতরে নিতে চাইলে এখানে দেওয়া অপশন থেকে আপনাকে ফি পরিশোধের মাধ্যম থেকে বিকাশ, নগদ, রকেট উপায়, একপে থেকে যেকোনো একটি বাছাই করে নিতে হবে। অতঃপর একটি ক্যাপচা থাকবে তা পূরণ করে পরবর্তী ধাপ ( ফি পরিশোধ ) বাটনে চাপতে হবে।

মৌজা ম্যাপের খোঁজ কীভাবে নেওয়া যায়


এই পর্যায়ে যে পেমেন্ট গেটওয়ে আপনি বাছাই করবেন সে পেমেন্ট গেটওয়ের একটি একাউন্ট নাম্বার চাইবে। এটা যেহেতু মোবাইল ব্যাংকিং তাই এখানে মোবাইল নম্বর দিতে হবে।

তারপর নিচের ডানপাশে CONFIRM বাটনে ক্লিক করে নিতে হবে।

এবং সাথে সাথেই আপনার প্রদত্ত মোবাইল একাউন্ট নাম্বারে একটি মেসেজ যাবে এবং ঐ একাউন্টের PIN নাম্বার চাইবে । যদি আপনি সঠিক PIN প্রদান করেন তাহলে আপনার পেমেন্টটি সঠিকভাবে প্রদান হয়ে যাবে।

পরবর্তী পর্যায়ে আপনাকে একটি রেফারেন্স নাম্বার সহ একটি কনফার্মেশন মেসেজ দেখাবে এবং মোবাইল নাম্বারের মেসেজ যাবে।

আপনি চাইলে পরবর্তীতে আপনার আবেদনের বর্তমান অবস্থা দেখতে পাবেন। এর জন্য আপনাকে মৌজা ম্যাপের ডানপাশে আবেদনের অবস্থা বাটনে ক্লিক করলে আবেদন ট্র্যাকিং নামে একটি বক্স আসবে। এখানে আবেদনের রেফারেন্স নাম্বরা প্রদান করে অনুসন্ধান বাটনে চাপ দিলেই আপনার আবেদনের বর্তমান অবস্থা দেখতে পারবেন।


প্রশ্নঃ  মৌজা ম্যাপ কি?

উত্তরঃ  মৌজা ম্যাপ হল একটি ভূগোলিক ম্যাপ যা একটি নির্দিষ্ট এলাকার বা ‘মৌজা’-র জমির সীমানা, আকার, ও অবস্থানের বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে। বাংলাদেশ, ভারত এবং অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশগুলিতে, মৌজা ম্যাপ ভূমি ব্যবস্থাপনা, নিবন্ধন, ও ভূমি কর নির্ধারণের জন্য একটি প্রধান নথি।

প্রশ্নঃ  মৌজা ম্যাপ কিভাবে বের করবো?

উত্তরঃ  মৌজা ম্যাপ বের করার জন্য অনলাইনে সরকারি সাইট https://eporcha.gov.bd/ এখানে গিয়ে উপরের নির্দেশনা মত কাজ করতে হবে।

প্রশ্নঃ  মৌজা ম্যাপের সার্টিফাইড কপি পেতে কত টাকা লাগে?

উত্তরঃ  মৌজার ফি ৫২০ টাকা এবং এর সাথে যুক্ত হবে আপনার দূরত্ব অনুযায়ী .ডাক খরচ।  

প্রশ্নঃ মৌজা ম্যাপের জন্য ফি কিভাবে পরিশোধ করতে হয়?

উত্তরঃ  মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়ের মাধ্যমে মৌজা ম্যাপের ফি পরিশোধ করা যাবে। 

প্রশ্নঃ মৌজা ম্যাপের সার্টিফাইড কপি পেতে কতদিন সময় লাগে?

উত্তরঃ এটি পেতে সাধারণত ১ থেকে ৫ দিনের সময় লাগে। স্থান ভেদে সময় বেশি লাগতে পারে। 

প্রশ্নঃ  মৌজা ম্যাপের আবেদনের অবস্থান কিভাবে জানা যায়?

উত্তরঃ আবেদনের রেফারেন্স নাম্বার দিয়ে বা কোড দিয়ে ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়। 

প্রশ্নঃ মৌজা ম্যাপ কিভাবে কোথায় থেকে সংগ্রহ করবো?

উত্তরঃ আপনি আবেদন করার সময় আপনার যে মেইলিং ঠিকানা দেওয়া থাকবে সেই অনুযায়ী ডাক যোগে ঘরে বসেই পাবেন।

পরিশেষে একটি কথা, আপনার জমি সংক্রান্ত যে সকল বিষয়াদি আছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সঠিক তথ্যের মাধ্যমে সহযোগিতা করা চেষ্ঠা করেছি। এবং অনেকগুলো তথ্য বর্তমানে অনলাইনের বিভিন্ন টুলসের উপর লিখা হয়েছে। তাই পরবর্তীতে টুলস বা ওয়েবসাইটের লুকিং-এ পরিবর্তন থাকতে পারে।

তাই নিজে সচেতনভাবে কার্য সম্পাদন করবেন।

Next Post Previous Post