সর্বজনীন পেনশন স্কিম বা জাতীয় পেনশন স্কিম কি এবং কেন

 

সার্বজনীন পেনশন সম্পর্কে সকল তথ্যাদি।

আজকে আমরা জানতে পারবো সর্বজনীন পেনশন স্কিম বা জাতীয় পেনশন স্কিম কি এবং কেন, সার্বজনীন পেনশন স্কিমে কোন কোন বয়সের লোকেরা আবেদন করতে পারবে, সার্বজনীন পেনশন স্কিম এর জন্য কোন ওয়েবসাইটে এবং কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, সার্বজনীন পেনশন স্কিমে কয় ধরনের স্কিম আছে ও কি কি, মাসে কত টাকা দিলে কত পেনশন এবং সর্বজনীন পেনশন সুবিধাগুলো কি কি।



সর্বজনীন পেনশন স্কিম বা জাতীয় পেনশন স্কিম কি এবং কেন

সার্বজনীন পেনশন স্কিম কি তা জানার আগে এর সার্বজনীন পেনশন স্কিম এর সাথে জড়িত কিছু বিষয় আছে তা আগে জানতে হবে। বর্তমানের বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। এবং গড় আয়ু প্রায় ৭২.৩ বছর। তবে বর্তমানে কিন্তু এই জনসংখ্যার লভ্যাংশ বাংলাদেশ ভোগ করছে। মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৬২ জন কাজ করছে তবে শতকরা ৭ জন লোক আছে যারা ৬৫ বছর বয়সের উর্ধবে আছে যারা কিন্তু মোট কর্মক্ষম জনসংখ্যার উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের জনসংখ্যা আগামী ২০৫০ সালে প্রায় শতকরা ২৫ জন বৃদ্ধি পাবে। তার সাথে তাল মিলিয়ে বাড়বে গড় আয়ু এবং যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবারের সংখ্যা। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাবে একক নির্ভরতা।

তাই আগামী ক্রমবৃদ্ধিমান প্রবীণ জনগোষ্ঠিকে একটি স্থায়ী কিন্তু নিরাপদ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে যে একটি পেনশন স্কিম যা জাতীয় সংসদে “সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন , ২০২৩”নামে একটি আইন পাশ করেছে এবং যার দ্বারা গঠিত জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যে স্কিম পরিচালিত তাই হলো সার্বজনীন পেনশন স্কিম।

সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় কোন বয়সের লোক আবেদন করতে পারবে

সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা হলো বাংলাদেশের আইনের আওতায় ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল নাগরিক এই সার্বজনীন পেনশন স্কিমের জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে যদি ৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যাক্তি হয় তাহলে ঐ ব্যাক্তিও সার্বজনীন পেনশন স্কিমের জন্য আবেদন করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত থাকে যে সকল ক্ষেত্রেই কমপক্ষে ১০ বছর এই সার্বজনীন পেনশন স্কিমের চাঁদা নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানরত বা কর্তমরত যেকোনো বাংলাদেশি এই স্কিমের জন্য আবেদন করতে পারবে।

মোবাইল আসক্তি থেকে শিশুদের কিভাবে মুক্ত করা যায় তা জানতে এখান পড়ুন। 

সার্বজনীন পেনশন ওয়েবসাইট এবং রেজিষ্ট্রেশন

সার্বজনীন পেনশন স্কিমে রেজিস্টেশন করতে হলে আপনাকে যেকোনো ইন্টারনেট ব্রাউজারে গিয়ে সার্বজনীন পেনশন স্কিম রেজিস্ট্রেশন লিখে সার্স করলে প্রথম যে লিংক আসবে সেটা অথবা https://www.upension.gov.bd/Public/Registration এই লিংকে ক্লিক করলে নিচের চিত্রের মত দেখতে পাবেন। এখানে আমি সম্মত আছ বাটনে ক্লিক করলে আপনাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে।

এই ধাপে আপনাকে এখান থেকে স্কিম টাইপ এবং ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি কোন স্কিম সিলেক্ট করবেন বা আপনার জন্য কোন প্যাকেজ তা নিচে আলোচনা করছি।

তারপর আপনার কিছু তথ্য দিয়ে সেখানে সম্পন্ন করতে পারবেন।

আরও বিস্তারিত জানার জন্য এখানে দেখতে এখানে ক্লিক করুন

সার্বজনীন পেনশন স্কিমে কয় ধরনের স্কিম আছে ও কি কি

সার্বজনীন পেনশন স্কিমে মোট ৪টি স্কিম রয়েছে। এগুলো হলোঃ প্রগতি স্কিম, সমতা স্কিম, প্রবাস স্কিম ও সুরক্ষা স্কিম।

প্রগতি স্কিম কি?

প্রগতি পেনশন স্কিম ব্যক্তি মালিকানাধীন অথবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য এই স্কিম। এক্ষেত্রে সুবিধাভোগী তার নিজস্ব পছন্দমতো একটি চাঁদার হার নির্ধারণ করবে। তবে এখানে যত টাকা সে নির্ধারণ করবে তার ৫০% নিজে এবং অপর ৫০% তার প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে। তবে এক্ষেত্রে আগে কোম্পানী তার পেনশন স্কিমের আইন অনুযায়ী আগে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সেরে নিতে হবে। এক্ষেত্রে যদি কোম্পানি নিবন্ধন না করে তাহলে চাইলে ব্যাক্তি নিজে এককভাবে আবেদন করতে পারে।

এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ হবে ২,০০০/-, ৩,০০০/-, ৫,০০০/- এবং ১০,০০০/-

চাকুরীর প্রস্তুতির জন্য সাধারণ জ্ঞান কুইজ পর্ব ০১

সমতা স্কিমঃ

নিজ কর্মে নিয়োজিত কিন্তু অতি দারিদ্র্য জনগোষ্ঠির জন্য এই সার্বজনীন পেনশন স্কিম। এক্ষেত্রে অতি দারিদ্র্যতার প্রমাণ উপাস্থাপন করতে হবে। এটি হবে যখন আবেদন করা হবে তখনকার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এর ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী।

এই স্কিমের আওতায় সার্বজনীন পেনশন স্কিমের মাসিক চাঁদার পরিমাণ হবে ১,০০০/- তবে এক্ষেত্রে সুবোধাভোগী জমা করবে ৫০০/- এবং সরকার ঐ ব্যক্তির নামে জমা করবে ৫০০/-।

প্রবাস স্কিমঃ

বাংলাদেশের বাইরে যারা অবস্থান করছে বা কর্মরত আছেন তারা ইচ্ছে করলে এই স্কিমের আওতায় আবেদন করতে পারেন। এক্ষেত্রে কিছু শর্ত আছে যেমনঃ সে বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় সে বৈদিশিক মূদ্রায় তার চাঁদা জমা করতে হবে।

তবে সে দেশে ফিরে আসার পর থেকে সে বাংলাদেশি টাকায় চাঁদা জমা করতে পারবে এবং ইচ্ছে করলে সে তার স্কিম পরিবর্তন করতে পারবে।

এক্ষেত্রে তার চাঁদার পরিমাণ হবে মাসিক ২,০০০/-, ৫,০০০/-, ৭,৫০০/- ও ১০,০০০/- এর যেকোনো একটি।

সুরক্ষা স্কিমঃ

নিজের কর্ম আছে যেমনঃ কৃষক, জেলে, রিক্সাচালক ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত তাদের জন্য হচ্ছে সুরক্ষা স্কিম। এক্ষেত্রে সে নির্ধারিত চাঁদা দিয়ে এর সুবিধা নিতে পারে।

এই সার্বজনীন পেনশন স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ হবে ১,০০০/-, ২,০০০/-, ৩,০০০/- ও ৫,০০০/- টাকা।

মাসে কত টাকা দিলে কত পেনশন

প্রগতি স্কিমঃ

মাসিক চাঁদার  পরিমাণ

চাঁদা প্রদানের মোট সময় ( বছর )

২,০০০ টাকা

মাসিক পেনশন (টাকা)

৩,০০০ টাকা

মাসিক পেনশন (টাকা)

৫,০০০ টাকা

মাসিক পেনশন (টাকা)

৪২৬৮,৯৩১১,০৩,৩৯৬১,৭২,৩২৭
৪০৫৮,৪০০৮৭,৪০১১,৪৬,০০১
৩৫৩৮,৩৭৪৫৭,৫৬১৯৫,৯৩৫
৩০২৪,৯৩২৩৭,৩৯৮৬২,৩৩০
২৫১৫,৯১০২৩,৮৬৪৩৯,৭৭৪
২০৯,৮৫৪১৪,৭৮০২৪,৬৩৪
১৫৫,৭৮৯৮,৬৮৩১৪,৪৭২
১০৩,০৬০৪,৫৯১৭,৬৫১

 

সমতা স্কিমঃ

মাসিক চাঁদার  পরিমাণ

চাঁদা প্রদানের মোট সময় ( বছর )

১,০০০ টাকা

মাসিক পেনশন (টাকা)

৪২৩৪,৪৬৫
৪০২৯,২০০
৩৫১৯,১৮৭
৩০১২,৪৬৬
২৫৭,৯৫৫
২০৪,৯২৭
১৫২,৮৯৪
১০১,৫৩০

 

প্রবাস স্কিমঃ

মাসিক চাঁদার  পরিমাণ

চাঁদা প্রদানের মোট সময় ( বছর )

৫,০০০ টাকা

মাসিক পেনশন (টাকা)

৭,৫০০ টাকা

মাসিক পেনশন (টাকা)

১০,০০০ টাকা

মাসিক পেনশন (টাকা)

৪২১,৭২,৩২৭২,৫৮,৪৯১৩,৪৪,৬৫৫
৪০১,৪৬,০০১২,১৯,০০১২,৯২,০০২
৩৫৯৫,৯৩৫১,৪৩,৯০২১,৯১,৮৭০
৩০৬২,৩৩০৯৩,৪৯৫১,২৪,৬৬০
২৫৩৯,৭৭৪৫৯,৬৬১৭৯,৫৪৮
২০২৪,৬৩৪৩৬,৯৫১৪৯,২৬৮
১৫১৪,৪৭২২১,৭০৮২৮,৯৪৪
১০৭,৬৫১১১,৪৭৭১৫,৩০২

 

সুরক্ষা স্কিমঃ

মাসিক চাঁদার  পরিমাণ

চাঁদা প্রদানের মোট সময় ( বছর )

১,০০০ টাকা

মাসিক পেনশন (টাকা)

২,০০০ টাকা

মাসিক পেনশন (টাকা)

৩,০০০ টাকা

মাসিক পেনশন (টাকা)

৫,০০০ টাকা

মাসিক পেনশন (টাকা)

৪২৩৪,৪৬৫৬৮,৯৩১১,০৩,৩৯৬১,৭২,৩২৭
৪০২৯,২০০৫৮,৪০০৮৭,৪০১১,৪৬,০০১
৩৫১৯,১৮৭৩৮,৩৭৪৫৭,৫৬১৯৫,৯৩৫
৩০১২,৪৬৬২৪,৯৩২৩৭,৩৯৮৬২,৩৩০
২৫৭,৯৫৫১৫,৯১০২৩,৮৬৪৩৯,৭৭৪
২০৪,৯২৭৯,৮৫৪১৪,৭৮০২৪,৬৩৪
১৫২,৮৯৪৫,৭৮৯৮,৬৮৩১৪,৪৭২
১০১,৫৩০৩,০৬০৪,৫৯১৭,৬৫১

 

সর্বজনীন পেনশন সুবিধা কি কি

সার্বজনীন পেনশন স্কিম বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে যার কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার প্রবীণ লোকদের কথা মাথায় রেখে এবং তাদের সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করে এই সুবিধাগুলো প্রদান করেছে। এগুলো-

১. পেনশনে থাকাকালীন যদি ৭৫ বছর হওয়ার পূর্বেই সুবিধাভোগীর মৃত্যু হয় তাহলে সুবিধাভোগীর ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার যে অবশিষ্ট সময় থাকবে সে সমুদয় টাকা তার মনোনীত ব্যাক্তিকে প্রদান করবে।

২.চাঁদাপ্রদানকারী বা যে সুবিধাভোগী হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন সে তার জমাকৃত টাকা থেকে সর্বোচ্চ স্বল্প সুদে ঋণ হিসাবে উত্তোলন করতে পারবে।

৩.  মাসিক পেনশন প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে এবং জমাকৃত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য হওয়ায় সে কর রেয়াতের সুযোগ পাবে।

৪. অতি দারিদ্যে এবং অস্বচ্ছল চাঁদা দাতাদের জন্য সরকার কর্তৃক মাসিক চাঁদার একটি অংশ প্রদান।

৫. সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদার হার এবং স্কিম পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।

৬.  বয়সের কথা চিন্তা করেই ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী এবং যদি ৫০ বছর বয়সী বা এর বেশি বয়সের ব্যাক্তি হয় তাহলে তার কথা চিন্তা করেই বলা হয়েছে যে, সে ব্যক্তি চাঁদা প্রদান করতে পারবে তবে যখন থেকেই চাঁদা প্রদান শুরু করে সেখান থেকে ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার পরেই সে পেনশনের যোগ্য বলে ধরা হবে।

Next Post Previous Post