জন্ম নিবন্ধন আবেদন কিভাবে করতে হয় এবং কি কি লাগে তার সাথে আমরা জানবো কোন বয়সের মানুষের জন্য কি কি কাগজপত্র এবং এর সাথে আর কি কি লাগে। তাহলে প্রথমেই জানতে হবে জন্ম নিবন্ধন কি এবং কেন?
জন্মনিবন্ধন কি এবং কেন
জন্ম নিবন্ধন আবেদন কিভাবে করতে হয় এবং কি কি লাগে তা জানার আগে আমাদের জানতে একটি শিশু জন্ম নেওয়ার পর সরকারিভাবে নির্ধারিত নিবন্ধন বইয়ে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক নিয়ম মেনে শিশুর নাম, জন্ম তারিখ, বাবা-মায়ের নাম, জন্ম স্থান ইত্যাদি তথ্য দিয়ে লিখানোকেই জন্মনিবন্ধন বলে।
এটিই একটি শিশুর প্রথম কোন পত্র যা সরকারিভাবে একটি পত্র বা সনদ পায়। একটি শিশু তার আইনগত অধিকার, নাম ও জাতীয়তা নিশ্চিত করার প্রথম ধাপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ সরকার একটি শিশুর জাতীয় অধিকার এবং জন্মগত অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০০৬ সাল থেকে কাজ করে আসছে এবং ২০১০ সাল থেকে অনলাইনের মাধ্যমে এই সেবা প্রদান করে আসছে।
তবে একজন শিশু শুধুমাত্র একবার বা একটি জন্ম সনদ এর অধিকারী হবে।
জন্ম নিবন্ধনের আবেদন কিভাবে করতে হয় এবং কি কি লাগে
জন্মনিবন্ধন আবেদন করতে গেলে কিছু ডকুম্যান্টসের প্রয়োজন পড়ে। তবে তা বিভিন্ন ক্ষেত্র অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের চাহিদা তৈরি হয়।
বর্তমানে মানে ২০২৪ সালে এসে যদি জন্ম নিবন্ধন করাতে চান তাহলে আপনার ইপিআই টিকা কার্ড সহ আরোও কিছু তথ্যাদির প্রমাণক লাগে যা বয়স ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। তা নিম্নে তুলে ধরা হলো।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম বা জাতীয় পেনশন স্কিম জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আবেদনকারীর ০ থেকে ৪৫ দিন বয়সী শিশুর জন্মনিবন্ধন করতে কি কি লাগে
১. ইপিআই কার্ড বা টিকা কার্ড ( যদি না থাকে তাহলে হাসপাতালের ছাড়পত্র)।
২. যে তারিখে জন্মবিবন্ধনের জন্য আবেদন করছেন সেই সালের পরিশোধিত হোল্ডিং ট্যাক্স এর সনদ বা রশিদ।
৩. পরিবারের যকোনো একটি সচল মোবাইল নাম্বার।
৪. আবেদনকারীর মা-বাবার অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ।
৫. আবেদনকারীর মা-বাবার জাতীয় পরিচয় পত্র ( অতিরিক্ত )।
শিশুর মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় জানতে ক্লিক করুন।
আবেদনকারীর ৪৬ দিন থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্মনিবন্ধন করতে কি কি লাগে
১. ইপিআই কার্ড বা টিকা কার্ড ( যদি না থাকে তাহলে হাসপাতালের ছাড়পত্র)।
২. যে তারিখে জন্মবিবন্ধনের জন্য আবেদন করছেন সেই সালের পরিশোধিত হোল্ডিং ট্যাক্স এর সনদ বা রশিদ।
৩. পরিবারের যকোনো একটি সচল মোবাইল নাম্বার।
৪. আবেদনকারীর মা-বাবার অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ।
৫. আবেদনকারীর মা-বাবার জাতীয় পরিচয় পত্র ( অতিরিক্ত )।
৬. আবেদনকারীর যদি বিদ্যালয়ের ভর্তিকৃত হয় তাহলে ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়ণ।
আবেদনকারীর ৫ বছর বয়সের বেশি বয়স হলে জন্মনিবন্ধন করতে কি কি লাগে
১. ইপিআই কার্ড বা টিকা কার্ড ( যদি না থাকে তাহলে হাসপাতালের ছাড়পত্র)/ যদি না থেকে তাহলে সরকারি রেজিস্টার্ড এমবিবিএস কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়ণ।
২. যে তারিখে জন্মবিবন্ধনের জন্য আবেদন করছেন সেই সালের পরিশোধিত হোল্ডিং ট্যাক্স এর সনদ বা রশিদ/ যদি নতুন জায়গায় নিবন্ধন করতে আবেদন করবে সেখানকার জমি ক্রয়ের রশিদ বা দলিল।
৩. পরিবার বা নিজের যকোনো একটি সচল মোবাইল নাম্বার।
৪. আবেদনকারীর মা-বাবার অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ।
৫. আবেদনকারীর মা-বাবার জাতীয় পরিচয় পত্র ( অতিরিক্ত )।
৬. আবেদনকারীর যদি বিদ্যালয়ের ভর্তিকৃত হয় তাহলে জে এস সি/ এস এস সি বা যেকোনো পাবলিক পরীক্ষার সনদ যদি না থাকে তাহলে ভর্তিকৃত বিদ্যালয়ের প্রধান কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়ণ।
উপরে উল্লিখিত কাগজপত্র যদি থাকে তাহলে আপনি নির্ধারিত ফরমে হাতে লিখে তারপর আপনি যে ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় আছেন সেই ইউপি অফিসে জমা দিতে হবে। এছাড়াও আপনি অনলাইনে নিজে নিজে আবেদন করতে পারবেন।
তবে যদি আপনি প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দেখাতে ব্যর্থ হোন বা অক্ষম হোন তাহলে রেজিস্টার জেনারেল অফিসে যোগাযোগ করলে সমাধান পাওয়া যেতে পারে। এটা নির্ভর করবে তখনকার আইন ও পরিস্থিতির উপর।
নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন কিভাবে করতে হয়
জন্ম নিবন্ধন যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করাটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যদি আপনার আবেদনের মধ্যে কোনো ভুল থেকে থাকে এবং আপনি সনদ পেয়ে যান তাহলে সেই ভুল ঠিক করতে আরও অনেক বেশি সময় এবং পরিশ্রমের প্রয়োজন। তাই আবেদনের সঠিক নিয়ম জানা অতীব দরকার।
নতুন জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে গেলে প্রথমেই আপনাকে বাংলাদেশ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন এর অফিসিয়াল সাইটে যেতে হবে (https://bdris.gov.bd/br/application).
তারপর কয়েকটি ধাপে এটি আপনাকে সম্পন্ন করতে হবে।
ধাপ ১
আপনাকে বাংলাদেশ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গেলেই নিচের চিত্রের মতো একটি চিত্র এখতে পারবে। এখান থেকে আপনি কোন ঠিকানায় থেকে আবেদন করবেন তা নির্বাচন করতে হবে। যেমন তিনটি অপশন পাবেন। সেগুলো জন্মস্থান, স্থায়ী ঠিকানা এবং আপনি যদি বাংলাদেশ দূতাবাসে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে চান তবে এটি নির্বাচন করুন।
এখান থেকে আপনার জন্য যেটি প্রযোজ্য সেটিকে নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে বিষয়টি পরিষ্কার করতে চাই যে, আপনি আবেদনকারী যেখানে জন্ম গ্রহণ করেছে সে উপজেলার ইউনিয়ন থেকে করতে পারবে।
যদি উদাহরণ হিসেবে বলি যে স্বপ্নিল-এর বাবা কাজের জন্য ঢাকায় অবস্থান করছে এবং এখানেই স্বপ্নিলের জন্ম হয়। তবে তাদের গ্রামের বাড়ি এবং স্থায়ী ঠিকানা কিশোরগঞ্জ। তাহলে সে এক্ষেত্রে যদি জন্মস্থান সিলেক্ট করে তাহলে ঢাকা থেকে এবং যদি স্থায়ী ঠিকানায় আবেদন করতে চায় তাহলে সে কিশোরগঞ্জ থেকে আবেদন করতে হবে।
আর তৃতীয় যে অপশন আছে সেটি যদি দেশের বাইরে অবস্থান করে তাদের জন্য।
তবে আপনি যে স্থান নির্বাচন করবেন প্রিন্ট করে হার্ডকপি সে স্থানের অফিসে জমা দিতে হবে।
আপনি যেকোনো একটি অপশন বাছাই করে তারপর পরবর্তী অপশনে ক্লিক করলে আপনাকে দ্বিতীয় ধাপে নিয়ে নিয়ে যাবে।
ধাপ ২
জন্ম নিবন্ধনের আবেদন কিভাবে করতে হয় এবং কি কি লাগে এর এই ধাপে দুইটি ফরম থাকবে একটি বাংলা এবং অন্যটি ইংরেজিতে পূরণ করতে হবে। তবে খুব সাবধানতার সাথে পূরণ করতে হবে।
এখানে ব্যক্তিগত তথ্য এবং ঠিকানা এই দুইভাগে থাকবে। এখানে নামের দুইটি অংশ পূরণ করতে হবে প্রথম অংশ ও দ্বিতীয় অংশ পূরণ করতে হবে।পরে আপনার জন্মতারিখ পূরণ করার পর একটি পপ আপ আসবে যেখনে বয়স প্রমাণক হিসাবে আপনার কাছে পর্যাপ্ত কাগজ আছে কিনা তা জানতে চাইবে। যদি আপনার কাছে এইগুলো থাকে তাহলে আমার কাছে এই ডকুমেন্টগুলি আছে অপশনে ক্লিক করতে হবে।
তারপর আপনি আপনার মা-বাবার কততম সন্তান তা লিখে দিতে হবে। তারপর জন্মস্থানের ঠিকানা দিতে হবে। এখানে আপনি কিছু বাধ্যতামূলকভাবে কিছু ফিল্ড আছে তা পূরণ করতে হবে। এবং কিছু থাকবে অপশনাল। সবগুলো পূরণ করার পর পরবর্তী বাটনে চেপে পরের ধাপে যেতে হবে।
এক্ষেত্রে একটি কথা বলে নিচ্ছি বর্তমান আইন অনুযায়ী ২০০১ সালের পর যাদের জন্ম তাদের জন্য জন্ম নিবন্ধন এর জন্য আবেদন করতে হলে মা – বাবা দুজনেরই জন্ম সনদ বাধ্যতামূলক। এটি ছাড়া হবেনা।
ধাপ ৩
জন্ম নিবন্ধনের আবেদন কিভাবে করতে হবে এর এই ধাপে পিতা মাতার তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে। পূর্বে যেটি বলেছিলাম যে যদি আবেদনকারীর জন্ম সাল যদি ২০০১ এর পর হয় তাহলে মা এবং বাবার উভেয়রই জন্ম সনদ লাগবে এবং সেখানে দিতে হবে।
এক্ষেত্রে যদি শুধুমাত্র জন্ম সনদ নাম্বার দিলে এবং জন্ম তারিখ দিলেই পিতা মাতার নাম বাংলা এবং ইংরেজিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হয়ে যাবে।
আর যদি ২০০১ এর পূর্বে জন্মসাল হয়ে থাকে তাহলে বাবা মায়ের জন্ম সনদ বাধ্যতামূলক না , তাই দিলেও হবে আর যদি না দেওয়া হয় তাহলে ফিল্ডগুলো লিখে পূরণ করতে হবে। তারপর পরের ধাপের যাওয়ার জন্য পরবর্তী বাটনে চাপ দিতে হবে।
ধাপ ৪
জন্ম নিবন্ধনের কিভাবে আবেদন করতে হবে এই ধাপে এসে ঠিকানা দিতে হবে। ধাপে ২ এ যে ঠিকানা দিয়েছিলেন সেটি কিন্তু জন্মস্থানের তথ্য নির্দেশ করে যা পূর্বেই বলা হয়েছে।
আর এই ধাপে এসে যে ঠিকানা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে আবেদনকারীর নিজস্ব ঠিকানা। এখানেও ২ ভাগে ঠিকানা থাকবে যা স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা। এগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে একটি বিষয় হচ্ছে যে যদি আপনার ধাপ ২ এ প্রদত্ত ঠিকানা বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা একই হয় তাহলে এখানে চেক বক্সে টিক দিয়ে দিলেই হবে। আর যদি ভিন্ন হয় তাহলে টাইপ করে দিতে হবে।
এবং পরবর্তী বাটনে ক্লিক করে পরের ধাপে যেতে হবে।
ধাপ ৫
এই ধাপে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন কিভাবে করতে হয় এবং কি কি লাগে
এই ধাপে যদি আবেদন কারী নিজে অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে আসে তাহলে আবেদনাধীন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক থেকে নিজ সিলেক্ট করতে হবে আর যদি অন্য কেউ জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে অন্যান্য সিলেক্ট করতে হবে। এবং প্রয়োজনীয় তথ্যাদি লিখে দিতে হবে।
নিচের সংযোজন অপশন থেকে বয়স প্রমাণের জন্য উপরে উল্লিখিত টিকা কার্ড/ ডাক্তারের প্রত্যয়ণ/ জাতীয় পরিচয় পত্র যেটি প্রযোজ্য এবং থাকে সেটি । তারপর ঠিকানা প্রমাণের জন্য বিদ্যুৎ বিল/ জমি ক্রয়ের প্রমাণক/ মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র/ ইত্যাদি সংযোজন করতে হবে।
তারপর পরবর্তী বাটনে চাপ দিতে হবে।
ধাপ ৬
এই ধাপে এসে আমরা মোটের উপর একটি প্রিভিউ দেখতে পারবো। যদি কোনো তথ্য ভুল ধরা পড়ে তাহলে পূর্ববর্তী ধাপে গিয়ে সংশোধন করতে হবে এবং পূর্বে বর্ণিত ধাপগুলো অনুসরণ করে আবার এখানে আসতে হবে।
আর এই ধাপে যদি সকল তথ্যাদি সঠিক থাকে তাহলে নিচে ইমেইল এবং মোবাইল নম্বর দেওয়ার ফিল্ড থাকবে যেটি ওয়ান .টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি পাওয়ার জন্য দিতে হবে। সেক্ষেত্রে যেকোনো একটি দিয়ে ওটিপি পাঠান বাটনে চাপ দিলেই একটি ওটিপি চলে আসবে এবং এটি ইনপুট করে সাবমিট বাটনে চাপ দিতে হবে ।
এখানে আপনাকে একটি কনফার্মেশন মেসেজ দেখাবে। যেখানে একটি আবেদনপত্রের নাম্বার থাকবে। এবং সেটি কত তারিখের মধ্যে কোন অফিসে জমা দিতে হবে তা লিখা থাকবে।
তারপর নিচের অপশন থেকে আবেদনপত্র প্রিন্ট করুন বাটনে চাপ দিতে হবে। তারপর সেখান থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদনপত্রটি ডাউনলোড হয়ে যাবে।
যদি কোনো ইরর শো করে তাহলে হোম বাটনের পাশে আবেদনপত্র প্রিন্ট করুন অপশন থেকে আবেদনপত্রের ধরন সিলেক্ট করে প্রাপ্ত আবেদনপত্রের নম্বর এবং আবেদনের তারিখ দিয়ে প্রিন্ট অপশনে ক্লিক করলেই আবেদন পত্রের কপিটি পাওয়া যাবে।
আশাকরি জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে এবং জন্মনবন্ধনের আবেদন কিভাবে করতে হয় তা উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ঠ ধারণা দিতে পেরেছি। তারপরও যদি কোন ধরনের প্রশ্ন বা অস্পষ্ঠতা থেকে থাকে তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেননা।
পরিশেষে একটি কথা, সকল তথ্যগুলো বর্তমান সময়ে যখন আর্টিকেল লিখা হচ্ছে তখনকার। এটি যেহেতু সফটওয়ারের মাধ্যমে হয় এবং পরবর্তনশীল তাই কিছুটা পরিবর্তন হতেও পারে।
ধন্যবাদ।