আমরা যারা শিশুদের অভিভাবক আছি তাদের নিতান্তই কামনা থাকে যে আমাদের শিশু সর্বদাই নিরোগ ও সুস্থ থাকুক। কারণ একটি শিশু একটি পরিবারের আনন্দ ও হাসি খুশির একটি কারখানা। তার হাসি-কান্না, রাগ-অভিমান সবই যেন প্রতিটি মুহুর্তের জন্য নতুন কিছু আনন্দ আর সুখ দেয়।
কিন্তু ক্ষণিকের জন্যও যদি সে চুপচাপ থাকে তাহলে মনে হয় এই পরিবারে অনেক কিছু নেই। আর সেটা হয়ে থাকে যদি ছোট্ট সোনামণি অসুস্থ হয়ে যায়। আর আজকে শিশুদের এমন একটি অসুখ নিয়ে কথা বলবো যা প্রায়ই শিশুরা ভুগে থাকে।
আজ শিশুদের রক্তে ইনফেকশন নিয়ে আলোচনা করব যে তার লক্ষণগুলো কি কি, শিশুদের রক্তে ইনফেকশন হলে করণীয় কি , এবং শিশুদের রক্তে ইনফেকশনের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কি কি।
শিশুদের রক্তে ইনফেকশন কি?
শিশুদের রক্তে ইনফেকশন হওয়া একটি জটিল এবং ভয়ংকর বিষয়, যা সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নিলে মারাত্মক হতে পারে। রক্তে ইনফেকশন মূলত **সেপসিস** নামে পরিচিত, যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস সংক্রমণের মাধ্যমে ঘটতে পারে। এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন।
শিশুদের রক্তে ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি?
শিশুদের রক্তে ইনফেকশনের লক্ষণগুলো প্রথম দিকে খুব বেশি স্পষ্ট নাও হতে পারে, তাই বাবা-মায়েদের সচেতন থাকা জরুরি। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- উচ্চ জ্বর বা তাপমাত্রা বৃদ্ধি (১০১°F এর বেশি)।
- শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া (৯৬.৮°F এর নিচে)।
- শ্বাসকষ্ট বা দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস।
- খাওয়ায় অনীহা ও খুব দুর্বলতা অনুভব করা।
- অতিরিক্ত ঘুমাভাব বা চোখেমুখে ক্লান্তি।
- ত্বকের রঙের পরিবর্তন যেমন প্যাল বা নীলচে হয়ে যাওয়া।
- হৃদস্পন্দনের পরিবর্তন (দ্রুত বা ধীর)।
শিশুদের মোবাইল আসক্তি থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় তা জানতে এখানে ক্লিক করুন।
শিশুদের রক্তে ইনফেকশন হলে করণীয় কি কি?
যদি আপনি টের পান বা বুঝতে পারেন তাহলে যত দ্রুত সম্ভব নিচের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। এতে করে আপনার পরিবারের হাসি-খুশি অবিচল থাকবে।
১. ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করাঃ
যদি কোনো রকম ইনফেকশনের সন্দেহ হয়, বিশেষ করে উচ্চ জ্বর, দুর্বলতা বা শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। রক্তে ইনফেকশন দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন, কারণ এটি অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই কখনও অবহেলা করবেন না। এটিই হবে আপনার জন্য সর্বোত্তম পন্থা। তারপর ডাক্তার যদি মনে করে নিচের কাজগুলো করবে সেটা আপনার চিন্তা না করলেও চলবে।
রক্ত পরীক্ষা করানো
রক্তে ইনফেকশনের প্রকৃতি বুঝতে ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা করানো জরুরি। রক্তের কালচার, সিবিসি (CBC), প্রো কালসিটোনিন (PCT) বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে সংক্রমণের ধরন এবং তীব্রতা নির্ধারণ করা হয়।এবং ডাক্তার যদি আরও কিছু মনে করে তাহলে তিনি এডভাইস করতে পারেন।
অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। চিকিৎসা শুরু করার আগে ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা করে কোন ব্যাকটেরিয়ার কারণে সংক্রমণ ঘটছে তা নির্ধারণ করেন, এবং সেই অনুযায়ী সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক দেন। তবে আপনাকে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, কখনও ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়া চরম একটি খারাপ অভ্যাস।
হাসপাতালে ভর্তি
রক্তে ইনফেকশনের ক্ষেত্রে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন হতে পারে, বিশেষত যদি তার অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিশুকে স্যালাইন দেওয়া, অক্সিজেন সরবরাহ করা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হবে।
শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা
শিশুর শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তার শরীর মুছে দেওয়া বা গায়ে হালকা কাপড় পরানো যেতে পারে। তবে খুব ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা উচিত নয়। কুসুমগরম পানির মধ্যে নরম কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জ্বর নিয়ন্ত্রণের ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং পুষ্টিকর খাবার
যদি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার পর এবং লক্ষনগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনার শিশুর রক্তে ইনফেকশন তাহলে আপনাকে একটু বাড়তি যত্ন নিতে হবে। রক্তে ইনফেকশনের সময় শিশুরা অনেক দুর্বল হয়ে যায়, তাই তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে। এছাড়াও, পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার দেওয়া জরুরি, যেমন স্যুপ, ফলের রস, দুধ ইত্যাদি।
পর্যাপ্ত পানি পান
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা সকল মানুষের জন্যই না সকল প্রাণির জন্যই স্বাস্থের জন্য ইতিবাচক উপাদান। তাই ইনফেকশনের কারণে শরীর থেকে তরল বের হয়ে যায়, তাই শিশুকে পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার দিতে হবে। ডায়রিয়া বা বমি হলে ওরস্যালাইনও দিতে পারেন।
শিশুদের রক্তের ইনফেকশনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করে দেখুন।
শিশুর রক্তে ইনফেকশন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কি কি?
বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে বিভিন্ন অসুখ হয়ে থাকে। তবে আমরা যদি সতর্ক থাকি তাহলে কিন্তু আমরা অনেক বিপদ আপদ এমনকি বিভিন্নভাবে অসুস্থ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি। তাই নিচের নিয়মগুলো মানলে হয়তো আমরা এ থেকে মুক্ত থাকতে পারি।
১. স্বাস্থবিধি মেনে চলাঃ
শিশুর পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের আগে ও টয়লেটের পরে হাত ধোয়া, সঠিকভাবে গোসল করানো, এবং পরিষ্কার কাপড় পরানো উচিত। এমনকি স্বাস্থবিধি মেনে চললে আমরা সকল প্রকার রোগ বা অসুখ থেকে দূরে থাকতে পারি।
২. টিকা গ্রহণঃ
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার শিশুদের জন্য জন্মের পর পরই টিকার ব্যবস্থা করেছে। তাই বর্তমানে বাংলাদেশের শিশু মৃত্যুর হারও অনেকাংশে কমে আসছে। তাই শিশুদের টিকা সময়মতো দিয়ে তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে ইনফেকশনের ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন কার্যকর হয়।
৩. বিশুদ্ধ পানি ও সুষম খাবারঃ
শিশুকে নিরাপদ পানি এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো উচিত। খাবার ভালোভাবে রান্না করে দিতে হবে এবং বাইরে থেকে আসা অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়ানো উচিত।
শিশুদের যেকোনো অসুখ-বিসুখ হলে তা দ্রুততার সাথে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকে দেখাতে হবে। এর কোনও বিকল্প নাই। এর আগে আমাদের শিশুদের যাতে করে কোনও প্রকার অসুখ না হয় বা অসুস্থ না হয় সেই বিষয়ে আমাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
শিশুদের রক্তে ইনফেকশন হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সঠিক যত্নই পারে শিশুকে সুস্থ করে তুলতে। বাবা-মায়েদের এই বিষয়ে সবসময় সতর্ক থাকা উচিত এবং ছোট লক্ষণও উপেক্ষা করা উচিত নয়।